Debloker Amritasandhane ( yamunotri-gangotri-gomukh porbo ) / দেবলোকের অমৃতসন্ধানে (যমুনোত্রী-গঙ্গোত্রী-গোমুখ পর্ব)- প্রথম খন্ড

অনাদিকাল থেকে দেবতাত্মা হিমালয় ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য্যের প্রাণকেন্দ্ররূপে জনমানসে সুপরিচিত। গিরিরাজ হিমালয়ের দিব্য ভাবগম্ভীর রূপ, নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলী ও ভয়ঙ্কর সুন্দর তীর্থক্ষেত্রসকল যুগ-যুগান্ত ধরে ভারতের তথা বিশ্বের বিস্ময়। সেই পরম বিস্ময়ের আকর্ষণেই আজো দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষকোটি তৃষিত তাপিত মানুষ ছুটে আসে এই ধ্যানগম্ভীর গিরিশ্রেণীর বুকে – জাগতিক জীবনযন্ত্রণার ক্লেশ কিছুক্ষণের জন্য ভুলে গিয়ে এই অমৃতলোকের দিব্য স্পর্শ পাবার আশায়।
যুগে যুগে কত সিদ্ধযোগী, ঋষি, জ্ঞানী এবং মনীষী ছুটে এসেছেন হিমালয়ের বুকে সেই অপার্থিব অমৃতের খোঁজে, জীবন থেকে মহাজীবনের পথে উত্তরণের লক্ষ্যে। হিমালয় তাঁদের নিরাশ করেনি। জীবনের পরম সত্যস্বরূপকে তাঁরা উপলব্ধি করেছেন এই ধ্যানস্তব্ধ গিরিরাজের বুকে। এই হিমতীর্থের বুকে তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং বিস্ময়কর উপলব্ধি আজো কিংবদন্তীর রূপে ছড়িয়ে আছে ভক্তমনের মণিকোঠায়।

ছেলেবেলা থেকেই এমন বহু সাধকের তথা পরিব্রাজকের সান্নিধ্যে এসেছি আমি। সেই মহাত্মাদের মুখ থেকেই শুনেছি হিমালয়ের বুকে তাঁদেরই জীবনে ঘটে যাওয়া অজস্র অলৌকিক অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধির কথা। আমার ভ্রমণ-পিয়াসী মনকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে সাধক-পরিব্রাজক শ্রদ্ধেয় শ্রী প্রমোদকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং শ্রী উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সুমধুর দিব্য সান্নিধ্য। হিমালয়ের বুকে তাঁদের জীবনের অলৌকিক মাধুর্য্যময় অভিজ্ঞতাই আমার মানসলোকে প্রথম সৃষ্টি করে গিরিরাজের প্রতি এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ।

আমি বরাবরই যুক্তিবাদী; বাস্তবসম্মত যুক্তির মাধ্যমে বিচার-বিশ্লেষণ করে তবেই আসি সিদ্ধান্তে। তাই অনেক মনীষী, সাধুসন্ত ও পরিব্রাজকের মুখে হিমালয়ের বুকে ঘটে যাওয়া বহু অলৌকিক লীলার কথা শুনে বিস্মিত হয়েছি ঠিকই, কিন্তু বিশ্বাস বা অবিশ্বাস কিছুই করতে পারিনি। দুয়ের ক্ষেত্রে ছিল ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অভাব। তাই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হ’তে নিজেই নেমে পড়েছি পথে। অলৌকিকত্বের সাথে সাথে এই দেবভূমি হিমালয়ের প্রকৃত সত্যস্বরূপকে উপলব্ধি করাও ছিল আমার উদ্দেশ্য। মনে যে জেগেছিল জিজ্ঞাসা – হিমবন্তের অপার্থিব গভীর গম্ভীর মহামৌন রূপের মাঝে এমন কি পরশমানিক লুকিয়ে আছে যার আকর্ষণে যুগ যুগান্ত ধরে জীবনের পরম সত্যের পুজারীরা বারবার করে ছুটে এসেছেন হিমালয়ে! কোন যাদুকাঠির ছোঁয়ায় লক্ষ্যকোটি অতৃপ্ত হৃদয় এই অমৃতলোকে এসে খুঁজে পেয়েছে পরম তৃপ্তির মাধুর্য্য।

সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতেই আমাকে নামতে হয়েছে হিমালয়ের দুর্গম পথে। আমার চলার পথ মিশে গেছে কত মানুষের সাথে; কত মনের সান্নিধ্যে এসেছি আমি। প্রতিটি রূপের মাঝেই খুঁজে পেয়েছি অরূপ কবির অপরূপ কাব্যের ছোঁয়া। প্রতিটি চোখের দৃষ্টিতেই হিমালয়কে দেখেছি ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে আর তার মাধ্যমেই উপলব্ধি করেছি – এই তুষারতীর্থের বুকে কোথায় যেন এক সুরে এক হয়ে মিলে যায় মানব ও প্রকৃতি। দেবলোকের আঙিনায় প্রতিটি মানুষের সত্ত্বাই যেন মিশে যায় এক অপার্থিব দিব্য সত্ত্বার সাথে; এক অনাস্বাদিত আনন্দের অমৃতস্পর্শে ভরে ওঠে মন।

হিমালয় যে সত্যিই দেবলোক তা এই তুষারতীর্থের গহন অন্তরলোকে প্রবেশ করার পর থেকেই অজস্র অভিজ্ঞতার মাধ্যমে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি। পাশাপাশি জীবনের যে পরম সত্যের তথা অলৌকিকের অমৃতসন্ধানে এই হিমালয়ের ভয়ঙ্কর দুরারোহ ধ্বসবিধ্বস্ত পথে আমি নেমেছিলাম, গিরিরাজের স্নেহাশীষে সেই অরূপ চেতনার অতীন্দ্রিয় ঐশ্বর্য্যও আমার কাছে অধরা মাধুরী হয়ে থাকেনি। সাহিত্যের রূপে আমার সেই মহাবিস্ময়কর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকেই এই গ্রন্থে তুলে ধরেছি আমি। এই গ্রন্থ রচনার নেপথ্যে আমার একমাত্র উদ্দেশ্য – মৃত্যুতুল্য বিপদের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম হিমালয়ের নিভৃত কন্দরে কন্দরে পরিভ্রমণ করে যে অমৃতের স্বাদ আমি পেয়েছি তার দিব্য পরশ আমার লেখনীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ুক সকল মনের মাঝে; সকল মনের ধারা এক হয়ে মিশে যাক সেই অমৃত সাগরের মহাসঙ্গমের আনন্দগভীরে।

In stock

100.00

Additional information

Weight 300 g

Reviews

There are no reviews yet.

Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.