Food Kahini / ফুড কাহিনি

আপনি খেতে ভালোবাসেন? খাওয়াতে ভালোবাসেন? বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের প্রাপ্তিস্থান ও তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক? খাদ্যসংস্কৃতি সম্পর্কে আপনি আগ্রহী? এই প্রশ্নগুলির মধ্যে যদি কোন একটির উত্তর হ্যাঁ হয় তাহলে এই বইটি আপনার পড়া উচিত।

কিন্তু বইটি পড়ার আগে আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে যে এই বইতে আপনি মূলত মহানগর কলকাতা কেন্দ্রিক অসংখ্য বিখ্যাত খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যের প্রাপ্তিস্থান ও তাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তথা বর্ননা পাবেন। বইটি মূলত নন ফিকশন গোত্রের হলেও লেখক অত্যন্ত মুন্সিয়ানার সাথে বৈঠকি আড্ডার মোড়কে ও মজাদার ভঙ্গিতে প্রতিটি বিষয় উপস্থাপন করেছেন।

বইটি পাঁচটি অংশে বিভক্ত।

১)অবাক জলপান- কলকাতায় কোন কোন জায়গায় কি কি বিখ্যাত প্রাতরাশ বা সান্ধ্যকালীন জলখাবার পাওয়া যায় সেগুলি সম্পর্কে এই অংশে বলা হয়েছে। পোদ্দার কোর্ট অঞ্চলের চীনা জলখাবার, বিভিন্ন মোগলাই প্রাতরাশ, বিভিন্ন প্রকার তেলেভাজা, লুচি কচুরি, ফুচকার, বিভিন্ন রকমের রোল, মোমোর সম্পর্কে বলা হয়েছে।

২)নোলা শকশকঃ এই অংশটি এই বইয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ অংশ। এই অংশে পাঁচমিশালি প্রকারের খাদ্যের কথা বলা হয়েছে। কলকাতার বিভিন্ন পাইস হোটেল, কিছু আদি চীনা রেস্তোরাঁ, অফিসপাড়ার খাওয়াদাওয়া, প্রাচীন কিছু ক্যাফে কেবিন, দুর্গাপূজার সময়কার খাওয়া, বড়বাজারে পাওয়া কিছু বিশেষ খাদ্য, কলকাতায় লভ্য খাঁটি বৈদেশিক খাদ্যের সম্বন্ধে জানানো হয়েছে।

৩)মাছ মিষ্টি আরঃ এই অংশে দুই বাংলার খাদ্যাভ্যাস, ইলিশ মাছের গল্প, বিভিন্ন সন্দেশ, জয়নগরের বিখ্যাত মোয়া, কেক পেস্ট্রি, বিরিয়ানি সম্পর্কে লেখক জানিয়েছেন।

৪)খায় যত পানীয়ঃ এই অংশে কলকাতায় পাওয়া যায় এমন কিছু বিখ্যাত চা, শরবত ও সুরাপানের সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

৫)আর যাহা খায় লোকেঃ বইটির এই অংশে লেখক কলকাতা থেকে বাইরে বেরিয়েছেন। মুর্শিদাবাদের আম ও বিভিন্ন নবাবি খাওয়া, দীঘা পুরী দার্জিলিং এর কিছু বিখ্যাত খাদ্যের কথা, দক্ষিণ ভারতের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

যে কোন বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখার সময় আমি সবসময় বইটির ইতিবাচক দিকগুলি নিয়েই প্রথমে আলোচনা করি। কিন্তু এই বইটির ক্ষেত্রে আমি উল্টোটা করতে বাধ্য হচ্ছি, এর এক এবং একমাত্র কারণ বইটিতে অজস্র ভুল আমার নজরে এসেছে।

প্রথমত এই বইয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই আমার মনে প্রশ্ন উঠেছে, মোবাইলে জোমাটো বা লেখকের ইউটিউব চ্যানেলে যা তথ্য পাওয়া যায় তার অতিরিক্ত একটিও তথ্য এই বইতে নেই। এই বইটিকে কোনভাবেই খাদ্যসংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত করা যায়না, বড়জোর একটি কলকাতা ভিত্তিক ফুডগাইড বলা যেতে পারে।

দ্বিতীয়ত এই বইতে প্রদেয় তথ্য অনেকাংশেই অসম্পূর্ণ। লেখক সম্ভবত নিজের পছন্দের খাদ্য ও তাদের প্রাপ্তিস্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন, কিন্তু পাইস হোটেলের তালিকা থেকে আমন্ত্রণ, জগন্নাথ বা আদর্শ হিন্দু হোটেলের নাম বাদ পরা অনুচিত। সুরাযাপনের তালিকায় খালাসিটোলার দেশি মদের আড্ডার নাম নেই। বিরিয়ানির তালিকায় আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিত দাদা বৌদির হোটেল। পিটার ক্যাট বা মোবাম্বোর মতন বিখ্যাত কন্টিনেন্টাল খাদ্যের পরিবেশক রেস্তোরাঁগুলির নাম নেই।
জাকারিয়া স্ট্রিটের বিখ্যাত খাদ্যসম্ভারের কথাও আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিত।

তৃতীয়ত একটি ফুড গাইডে যে কোন হোটেল বা রেস্তোরাঁর কিছু বিশেষ মেনুর দাম উল্লেখ করা উচিত, সেগুলি অনুপস্থিত।

চতুর্থত বইটির প্রচ্ছদ অত্যন্ত দুর্বল। ছবির চরিত্রগুলিকে মজাদার ভঙ্গিমায় প্রকাশ করা হয়েছে। একটি খাদ্যসংস্কৃতি বা ফুডগাইডের বইতে যা একদমই মানানসই নয়।

পঞ্চমত বইটির নাম, ব্যকরণগত দিক দিয়ে কোন পুস্তকের নাম দুটি মিশ্র ভাষায় হওয়া অনুচিত।

ষষ্ঠত বইটিতে অজস্র বানান ভুল রয়েছে। যতিচিহ্ন ব্যবহার সঠিকভাবে হয়নি। একটি বইকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলতে শুধুমাত্র ভালো কাগজ বা উন্নত ছাপা যথেষ্ট নয়। উপযুক্ত প্রচ্ছদ ও বানানের সঠিক ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সপ্তমত বইটিতে যে সকল আলোকচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলিতে কোন হোটেলের ছবি বা কোন মেনুর ছবি সেগুলির উল্লেখ থাকা উচিত ছিল। অনেক আলোকচিত্র অস্পষ্ট ছাপা হয়েছে। বিখ্যাত কিছু হোটেল বা রেস্তোরাঁর ছবি দেওয়া উচিত ছিল।

অষ্টমত এই বইয়ের অন্তিম অংশে বেশ কিছু খাদ্যের পাকপ্রণালী দেওয়া হয়েছে, যা বইটিকে অযথা ভারাক্রান্ত করেছে।

বইটি সম্পাদিত হওয়া সত্বেও এতগুলি ভুল চোখ এড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয়। প্রুফ কারেকশনের বিষয়ে প্রকাশককে অনেক বেশি যত্নবান হতে হবে। আশা রাখি পরবর্তী সংস্করণে এই ত্রুটিগুলি সংশোধিত হবে।

এই বইটির অনেকগুলি ইতিবাচক দিকও রয়েছে। বাংলা ভাষায় খাদ্যসংস্কৃতি নিয়ে এমন ঝরঝরে ভাষায় ও বৈঠকি আড্ডাতে এর আগে কোন বই আমি পড়িনি। লেখক শ্রী ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ীর লেখনী সাহিত্যগত বিচারে খুব উন্নত না হলেও তাতে মিষ্টত্বের অভাব নেই। যে সমস্ত হোটেল বা রেস্তোরাঁর বর্ননা লেখক দিয়েছেন সেগুলিতে তিনি নিজে গিয়ে সেখানকার খাদ্যের স্বাদ আস্বাদন করে তারপরে লিখেছেন। ভোজনরসিক ও খাদ্যরসিক বাঙালি এই বইটি হাতে নিয়ে খুব সহজেই ফুডওয়াকের পরিকল্পনা করতে পারেন। বইটির কাগজের গুণমান, ছাপা, বাঁধাই অত্যন্ত উন্নত মানের। প্রচ্ছদটি উপযুক্ত না হওয়া সত্বেও গ্রন্থনির্মানের উৎকর্ষের জন্য বইটি একবার দেখলেই ভালো লেগে যায়। ২৩৪ পাতার হার্ডকভার বইটির দাম যথাযথ । পরবর্তী সংস্করণে ত্রুটিগুলি সংশোধন করে নিতে পারলে বইটি যথেষ্ট আকর্ষণীয় হবে।

In stock

290.00

Additional information

Weight 400 g

Reviews

There are no reviews yet.

Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.