Kkhanik Khnoje Chirontan (Madhyopradesh parbo) / ক্ষণিক খোঁজে চিরন্তন ( মধ্যপ্রদেশ পর্ব )

জীবন ক্ষণিকের মায়া। ক্ষণিকের তরেই তার স্থায়িত্ব। তবে এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের মাঝেই লুকানো থাকে চিরন্তনের কাছে যাওয়ার গুপ্ত পথ। কিন্তু সেই পথের দিশা খুঁজে পাওয়া বড় সহজ কাজ নয়। সেই লক্ষ্যে যেতে হলে প্রথমে শতসহস্র কামনাবাসনার মায়াজাল এবং শতকোটি প্রলোভনের বাধা অতিক্রম করে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযম আয়ত্ত্ব করতে হয়। তখনই একমাত্র জীবনের বহিরঙ্গের মূল স্বরূপ উপলব্ধি করা যায়। সেই উপলব্ধি থেকেই আসে জীবনের অন্তরঙ্গের স্বরূপ জানার ব্যাকুলতা আর এই ব্যাকুলতাই যুগিয়ে দেয় জীবন থেকে মহাজীবনের লক্ষ্যে পথ দেখানোর মত যথার্থ দিশারীর দেখা। এই দিশারী তথা গুরুই জীবনের গোলকধাঁধাঁর মাঝে লুকিয়ে থাকা শতসহস্র ভুল পথ থেকে হাত ধরে সরিয়ে এনে দেখিয়ে দেন সঠিক পথের দিশা এবং গুরু নির্দেশিত উপায় অবলম্বন করে সেই পথে যথাযথভাবে চলতে পারলেই সম্ভব হয় আত্মস্বরূপ লাভ তথা ইষ্টলাভ। তখনই মহাসিদ্ধির মাধ্যমে ক্ষণিকের নশ্বর জীবন লাভ করে চিরন্তন মহাজীবনের মর্য্যাদা। এতকাল ধরে ক্ষণিকের চিরন্তন সন্ধান হয়ে ওঠে সার্থক; দেখতে দেখতে ক্ষণিক নিজেই হয়ে ওঠে চিরন্তন। জীবাত্মা একাত্ম হয়ে যায় পরমাত্মার সাথে; সফল হয় জীবাত্মার জীবত্ব থেকে শিবত্বে উত্তরণ।
যখন জীবনের এই শ্রেষ্ঠ ব্রত সাফল্যের সাথে সুসম্পন্ন হয় তখন সাধক অতিক্রম করে যান জন্ম-মৃত্যুর স্তর। প্রকৃতির কোনকিছুই আর তখন তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। উপরন্তু প্রকৃতিকেই তখন তিনি নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার লাভ করেন আপন ইচ্ছামত। এমনকি, যে মৃত্যু প্রতিটি জীবনেরই সমাপ্তি নির্দ্ধারণ করে দেয় সেই মৃত্যুকেও তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপন ইচ্ছামত যত খুশি বছর দেহধারণ করে থাকতেও পারেন। আবার আপন খুশিমত দেহত্যাগ করে ফিরেও যেতে পারেন আপন সাধনোচিত ধামে।

পুণ্যভূমি ভারতবর্ষের সাধনজগতে এমন অনেক মহাত্মাই এসেছেন। সাধনার মাধ্যমে ক্ষণিক জীবনকে চিরন্তনের মহিমায় মহিমান্বিত করে জন্ম-মৃত্যুকে আপন ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রণ করেছেন এবং ঐশীনির্দিষ্ট কর্মযজ্ঞের শেষে যখন দেহবসানের প্রয়োজন মনে করেছেন তখন আগে থাকতেই দিনক্ষণ ঘোষনা করে নির্দিষ্ট সময়ে সমাধিযোগে দেহত্যাগ করেছেন। এমনই একজন মহাত্মা হলেন রুদ্রানন্দ স্বামী। এই মহান সিদ্ধ সাধক ১২০ বছর দেহে থাকার পর সমাধিযোগে কন্যাকুমারীতে দেহরক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্ত দুই মাস আগেই ভক্তদের জানিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর তারপর কয়েকজন নির্বাচিত ভক্তের সাথে তিনি বেরিয়ে পড়েছিলেন তীর্থভ্রমণে- জীবন থেকে শেষ বিদায়ের পূর্বে তাঁর সাধনস্মৃতি বিজড়িত তীর্থগুলিকে শেষবারের মত দর্শন করার উদ্দেশ্যে। সেই তীর্থভ্রমণের সময়ে তিনি যখন মধ্যপ্রদেশে আসেন তখনই তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হয় আমার এবং এমন মহাত্মার সাথে তীর্থভ্রমণের পরমানন্দও লাভ করি আমি। মধ্যপ্রদেশ, দ্বারকা-প্রভাস ও দক্ষিণ ভারতের তীর্থপথে এই মহাত্মার শেষবারের মত ভ্রমণ এবং কন্যাকুমারীতে ভক্তদের মৃত্যুর যথার্থ স্বরূপ বুঝিয়ে দিয়ে পূর্ব ঘোষণামত মহাসমাধির মাধ্যমে তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যু বরণের মুহুর্তগুলিকে আমি এখানে সাজিয়ে দিয়েছি অক্ষরের ক্যানভাসে।

এই গ্রন্থে ভ্রমণকাহিনীর আঙ্গিকে অবশ্যই রয়েছে মধ্যপ্রদেশ, নাসিক-শিরডি-শনি শিঙ্গনাপুর-দ্বারকা-প্রভাস এবং দক্ষিণ ভারতের মহাতীর্থসকল তথা সেখানকার শ্রেষ্ঠ পর্য্যটন কেন্দ্র সমূহ ভ্রমণের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ। সেই সাথে প্রতিটি তীর্থের ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, পৌরাণিক এবং আধ্যাত্মিক মহিমা তুলে ধরা হয়েছে যাতে আমার পাঠক-পাঠিকারা ঘরে বসেই এসব মহাতীর্থে মানসভ্রমণের স্বাদ নিতে পারেন। তবে সর্বোপরি ভ্রমণকাহিনীর উপন্যাস রসসিক্ত বিবরণ ছাড়িয়ে এই “ক্ষণিক খোঁজে চিরন্তন” গ্রন্থে প্রাধান্য পেয়েছে মহাত্মা রুদ্রানন্দজীর মহাজীবনের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার ঝাঁপি- কিভাবে তিনি খুঁজে পেলেন অধ্যাত্মপথের দিশা, কিভাবে তিনি পেলেন গুরুর সন্ধান, কিভাবে তিনি লাভ করলেন সিদ্ধির পরশ, কিভাবে জন্ম-মৃত্যুর চক্র অতিক্রম করে হয়ে উঠলেন মৃত্যুঞ্জয় এবং কিভাবে আগের থেকে ঘোষণা করা নির্দিষ্ট দিনক্ষণে উপস্থিত ভক্তবৃন্দের সামনে যৌগিক প্রক্রিয়ায় মহাসমাধির মাধ্যমে দেহত্যাগ করলেন পরমানন্দভরে। এক কথায়, মহাত্মা রুদ্রানন্দজীর ক্ষণিক থেকে চিরন্তন হয়ে ওঠার অপার্থিব অভিজ্ঞতাই আমার এই গ্রন্থের মুখ্য উপজীব্য।

রুদ্রানন্দজীর মত মহাপুরুষ যে আজকের যুগের ধ্রুবতারাস্বরূপ। যিনি ক্ষণিক জীবনকে দিতে পেরেছেন চিরন্তনের রূপ তাঁর সাধনলব্ধ অভিজ্ঞতা ও উপদেশ যে আমাদের অনেকেরই আঁধার জীবনে দেখাবে আলোর পথ – যে আলোর পথের শেষ ঠিকানায় লুকিয়ে আছে চিরন্তনের দিশা। তাইতো মহাত্মা রুদ্রানন্দজীর আনন্দময় সান্নিধ্য থেকে যে পরম তৃপ্তির অমৃতের স্বাদ আমি হৃদয়ে লাভ করেছি তা আমার আত্মার আত্মীয় পাঠক-পাঠিকাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্যই করেছি এই গ্রন্থরচনার প্রয়াস।আর ক্ষণিক খোঁজে চিরন্তন ( মধ্যপ্রদেশ পর্ব) হল ইচ্ছামৃত্যুসম্পন্ন মহাযোগী রুদ্রানন্দজীর সান্নিধ্যে নর্মদাতীর্থ মধ্যপ্রদেশের সকল মহাতীর্থে ও বিশিষ্ট পর্য্যটন কেন্দ্রে মুসাফির লেখকের ভ্রমণের রোমাঞ্চকর বিবরণ এবং সেইসাথে রুদ্রানন্দজীর জীবন থেকে মহাজীবনে উত্তরণের অপার্থিব অভিজ্ঞতার অপূর্ব বিবরণ।

In stock

80.00

Additional information

Weight 250 g

Reviews

There are no reviews yet.

Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.