MAHAPRAVUR NEELACHOLE AAJO CHOLE LEELA / মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা

জগন্নাথক্ষেত্র পুরীধাম ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ তীর্থগুলির মধ্যে অন্যতম। শ্রীজগন্নাথ মহাপ্রভুর এই লীলাক্ষেত্রে আজো লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটে যায় কত মহালীলা। কোন কোন ভাগ্যবানের চোখে ধরা দেয় সেই লীলামাধুরী।
পুরীধামের সাথে আমার অনেকদিনের সংযোগ। প্রতিবারের ভ্রমণ আমায় পুরীর আধ্যাত্মিক মহিমা উপলব্ধি করতে বিরাট সাহায্য করেছে। সেইসাথে পুরীধামের একটি বিশেষ রহস্যও তখন থেকেই আমায় বড় ভাবাত – শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর্দ্ধান প্রসঙ্গ। তাঁর স্থূলদেহের শেষ পরিণতি জানার জন্য প্রতিটি গবেষকের রচনাই আমি ভালভাবে বিশ্লেষণ করে পড়েছি। সব মিলিয়ে একটি যুক্তিযুক্ত উপসংহারও বের করেছিল আমার মস্তিষ্ক। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে তা প্রকাশ্যযোগ্য ছিল না। অতএব মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের শরণাগতি অবলম্বন করেছিলাম। বলেছিলাম, “মহাপ্রভু, তুমিই আলো দেখাও যাতে এর মূল সত্যটি আমি জানতে পারি।“ জগন্নাথ মহাপ্রভু আমার সেই প্রার্থনা শুনেছিলেন বলেই হয়তো ২০১২ সালে তিনি আমার শ্রীক্ষেত্র পরিক্রমার ব্যবস্থা করে দিলেন আমার বিশেষ সুহৃদ সুজয়ের সাথে। সুজয়ও পরিক্রমার জন্য একজন সঙ্গী খুঁজছিল। আর আমার তো মনে মনে প্রতীক্ষাই ছিল নীলাচল পরিক্রমার জন্য। অতএব সুজয়ের প্রস্তাব পেতেই এককথায় রাজি হয়ে গেলাম। বেরিয়ে পড়লাম নীলাচল পরিক্রমায়। তবে নীলাচল পরিক্রমায় নামলেও সেইসাথে ভুবনেশ্বর, উদয়গিরি, খণ্ডগিরি, ধবলগিরি, কোণারক, রামচণ্ডী মন্দির, আলালনাথ এবং নীলমাধবও আমরা দর্শন করেছি। সেইসাথে বিধি মেনে নীলাচলের পথ পরিক্রমা তো ছিলই। এই পরিক্রমায় জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিটি স্থান দর্শনের সাথে সাথে পদব্রজে নগ্নপায়ে পুরীধামের সকল শ্রেষ্ঠ মন্দিরও দর্শন করেছি। সেইসাথে নীলাচলের সকল তীর্থে দাঁড়িয়ে সেখানকার ঐতিহাসিক, পৌরাণিক ও আধ্যাত্মিক তত্ত্বও আলোচনা করেছি। সেইসাথে লাভ করেছি পুরীধামের মহাপ্রভু জগন্নাথদেব তথা তাঁর সচল বিগ্রহস্বরূপ মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের কৃপা।

এই কৃপালাভের জন্যই সার্থক হয়েছে আমাদের শ্রীক্ষেত্র পরিক্রমা। আর এই পরিক্রমাকালেই লাভ করেছি এক বিশিষ্ট ওড়িয়া ভক্ত শ্রীমাধব মিশ্রের সান্নিধ্য। প্রবীণ ভক্ত মিশ্রজী প্রতিবছর একবার করে আসেন শ্রীক্ষেত্র পরিক্রমায়। পরিক্রমা করাকালীন তাঁর কাছ থেকেও জেনেছি অনেক কিছু – বিশেষতঃ তাঁর ছোট্ট ছেলে চরণের অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা শুনে তো বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছি। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব যে আজো জ্যোতির্ময় দেহে বিরাজ করেন পুরীধামে, আজো যে তিনি তাঁর ভক্ত পার্ষদদের নিয়ে অমৃতময় নামগান করে চলেন সবার অগোচরে এবং আজো যে তিনি ভক্তদের দর্শন দিয়ে কৃপা করেন সেই অপার্থিব অভিজ্ঞতার কাহিনী মিশ্রজীর মুখে শুনে আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। সেইসাথে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অন্তর্দ্ধান নিয়ে যে সংশয় ছিল আমার মনে তাও এই জ্ঞানী ভক্তের অভিজ্ঞতার কথায় দূর হয়ে গেছে। মহাপ্রভু যে আজো আপন পরমানন্দময় স্বরূপে এখানে বিরাজ করছেন এবং স্থানীয় ভক্তগণ যে আজো অনেকেই তাঁর কৃপা লাভ করছেন সেই সংবাদ আমায় বড় তৃপ্তি দিয়েছে। সেইসাথে কৈলি বৈকুন্ঠে মিশ্রজীর বন্ধু পুরুষোত্তমজীর অপার্থিব অভিজ্ঞতা এবং বিশিষ্ট ওড়িয়া লেখক রবীন্দ্রনারায়ণ মিশ্রের শ্রীক্ষেত্রের অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতাসকল জানতে পেরেও আমি অভিভূত।

তাই ২০১২ সালে শ্রীক্ষেত্র পরিক্রমা করে যে অমৃতের আস্বাদ আমি পেয়েছি তা আমার সুপ্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্যই রচনা করলাম আমার এই গ্রন্থ ‘মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা‘। এই গ্রন্থরচনার নেপথ্যে আমার লক্ষ্য ছিল পুরীধামের আধ্যাত্মিক, পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক মহিমাসমন্বিত এমন একটি পরিক্রমার ভ্রমণ-কাহিনী লেখা যা হাতে নিয়ে পাঠক-পাঠিকারা সানন্দে নামতে পারেন পরিক্রমার পথে এবং প্রতিটি মন্দির দর্শনের সাথে সাথে এই দীন লেখকের মত সেখানকার মহিমা কীর্ত্তনও করতে পারেন। সেইসাথে যাতে তাঁরা পুরীধামের অপ্রাকৃত রহস্য তথা সেখানকার নিত্য ঘটমান অতীন্দ্রিয় লীলার আভাষ লাভ করেন সেটিও ছিল আমার লক্ষ্য। আমার এই লক্ষ্য তখনই পূরণ হবে যখন পাঠক-পাঠিকারা এই গ্রন্থটি পাঠ করে শ্রীক্ষেত্র পরিক্রমা তথা ভুবনেশ্বর, ধবলগিরি, উদয়গিরি- খণ্ডগিরি, কোণারক, আলালনাথ এবং নীলমাধব মানসভ্রমণের আনন্দ আস্বাদ

In stock

100.00

Additional information

Weight 200 g

Reviews

There are no reviews yet.

Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.