OTINDRIYO JAGATER AAHOWAN / অতীন্দ্রিয় জগতের আহ্বান

এই অনাদি অনন্ত মহাবিশ্ব পরমাত্মার দিব্যরূপের পরম প্রকাশ। পরমাত্মার এই রূপমাধুরীর এক ভাগ ব্যক্ত এবং তিন ভাগ অব্যক্ত। এই একটি ভাগ হ’ল ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য লোকিক জগৎ যার মধ্যে আবদ্ধ থাকে সাধারণ জীবসকল। মানবদেহের চক্ষু-কর্ণ-নাসিকা-জিহ্বা-ত্বকযুক্ত পঞ্চেন্দ্রিয়ের দৃষ্টিগ্রাহ্য তথা যুক্তিগ্রাহ্য বাস্তব জীবনের এই সীমায়িত গণ্ডীর মধ্যেই তারা জন্ম নেয়, বৃদ্ধি পায়, জরাগ্রস্ত হয় এবং একদিন ঝরে যায় মৃত্যুর কোলে। এই গতানুগতিক জগতে নেই কোন অমৃতের স্বাদ। সেই স্বাদ একমাত্র দিতে পারে পরমাত্মার সেই অনন্ত রূপমাধুরীর অপর অব্যক্ত ভাগ – মন, বুদ্ধি, কর্ম, চিন্তা, ভাবনার অতীত তথা ইন্দ্রিয়াতীত মহাজীবনের অপরিসীম অধ্যাত্ম ঐতিহ্যমণ্ডিত অতীন্দ্রিয় জগৎ। এই দেহাতীত, মনাতীত, ভাবাতীত এবং কালাতীত জগতের মধ্যেই র’য়েছে অনন্ত আনন্দ ও অমৃতের শাশ্বত মহাসম্পদ।
এই অতীন্দ্রিয় জগৎই হ’ল আমাদের প্রত্যেকের চিরন্তন নিবাস। ওখানেই পরমাত্মার অংশ থেকে আমাদের জন্ম হ’য়েছে এবং আমাদের প্রত্যেকের জীবাত্মাকে ওখান থেকেই পরমাত্মা পৃথিবীর মরলোকে পাঠিয়েছেন সাধনার মাধ্যমে পার্থিব বন্ধন অতিক্রম করে তাঁকে ফিরে পাওয়ার জন্য। প্রতিটি জীবাত্মার জন্যই পরমাত্মা নির্দিষ্ট ক’রে দিয়েছেন তিনটি করে দেহ – স্থুলদেহ, সূক্ষ্মদেহ এবং কারণদেহ। এই তিনটি দেহের ভিতরে বাস করে আত্মা।

অতীন্দ্রিয় জগতে আত্মাদের জন্য আছে সাতটি ‘লোক’ – ভুলোক, ভুবঃলোক,স্বঃলোক, তপোলোক, জনঃলোক, মহঃলোক এবং হিরণ্যলোক। এর মধ্যে ভুলোক হ’ল পৃথিবীর মাটির ঠিক উপরের স্তর। যারা জীবনভর কামনা-বাসনার পার্থিব বন্ধনে কাটিয়ে পৃথিবী থেকে শুধু পাপই অর্জন ক’রেছে তাঁরা মৃত্যুর পর এই ভুলোকেই ঘুরে বেড়ায় অতৃপ্ত অবস্থায়। এদেরই বলা হয় প্রেত। এদের উপরের স্তর হ’ল ভুবঃলোক।ভুবঃলোকের নিম্নস্তরে র’য়েছে নরক বা শোধনাগার – যেখানে ভুলোকের আত্মাদের থেকে সামান্য উন্নত আত্মাদের (যাদের সঞ্চয়ে পাপের সাথে সাথে কিছু পুণ্যও আছে) বিভিন্ন শাস্তির মাধ্যমে পাপস্থালন হয়। তবে যারা পৃথিবীতে করে যাওয়া সাধনা তথা পুণ্যকর্মের মাধ্যমে এই প্রথম দুটি লোক পেরিয়ে যায় তারা চিরতরে জন্ম-মৃত্যুর আবর্ত থেকে লাভ করে মহামুক্তি। এরপর অতীন্দ্রিয় জগতে চলতে থাকে তাদের সাধনা এবং সাধনার মাধ্যমে ক্রমশঃ ঊর্দ্ধলোকে তাদের গতি হ’তে থাকে। এই জগতে প্রতিটি কর্মের জন্য নির্দিষ্ট ‘লোক’ আছে। যেমন তপস্বীদের জন্য তপোলোক, জ্ঞানীদের জন্য জনঃলোক, ভক্তদের জন্য মহঃলোক। এই প্রতিটি ‘লোক’ –এই আছে অসংখ্য স্তর –নানা ভাবের পুণ্যাত্মাদের জন্য। এই সব ‘লোক’ –এর উপরে রয়েছে হিরণ্যলোক।

ইন্দ্রিয়ের জগতের সাথে অতীন্দ্রিয় জগতের র’য়েছে অচ্ছেদ্য যোগসূত্র। ইন্দ্রিয়ের জগৎ থেকে যেমন প্ল্যানচেট, সিয়ান্স-চক্র বা যোগসাধনার মাধ্যমে নানাভাবে অতীন্দ্রিয় জগতের অধিবাসীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয় তেমনই অতীন্দ্রিয় জগতের আত্মারাও নানা কারণে নেমে আসেন ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের অধিবাসীদের কাছে – কখনো সূক্ষ্মদেহে, কখনো বা নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রভাবে পৃথিবীর আবহমণ্ডল থেকে একটোপ্লাজম সংগ্রহ করে সাময়িকভাবে স্থুলদেহ ধারণের মাধ্যমে। আজ পর্যন্ত দেশে-বিদেশে এমন অভিজ্ঞতা বহু মানুষের জীবনেই ঘটেছে। এর মধ্যে স্বামী অভেদানন্দ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুদিন কুমার মিত্র প্রভৃতিদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু আমার এই গ্রন্থে আমি শুধু সেইসব অপ্রকাশিত অতীন্দ্রিয় ঘটানাই অন্তর্ভুক্ত ক’রেছি যা আমার একান্ত আপন প্রিয়জনদের এবং আমার ব্যক্তিগত জীবনে ঘটেছে। মূলতঃ ১৯৯৬ সালে মান্ডুর জাহাজমহলে বেড়াতে গিয়ে আমার যে অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা ঘটেছিল সেই ঘটনাটিকেই প্রেক্ষাপট ক’রে আমার প্রিয়জনদের তথা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া অন্যান্য অভিজ্ঞতাগুলির বিবরণ দিয়েছি আমি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাদুটি ছাড়া বাকি অভিজ্ঞতাগুলি আমাকে সবিশদভাবে খুলে বলার জন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ আমার বাবা শ্রীবিপুলকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, আমার মা শ্রীমতি মীরা গঙ্গোপাধ্যায়, আমার দিদিমা শ্রীমতি আশারানী মুখোপাধ্যায় এবং আমার মধ্যপ্রদেশের সফরসঙ্গী ডঃ সুবিনয় দাশের কাছে।

এর মধ্যে প্রথম অভিজ্ঞতাটি হ’ল বাবার পাঁচ খণ্ডব্যাপী ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ রচনার নেপথ্যকাহিনী যার কিছুটা ইঙ্গিত রহস্যের মোড়কে দেয়া আছে ওই মহাগ্রন্থের প্রথম খণ্ডের ভূমিকায়। কিন্তু অমানিশার মহাযোগে বাবার ওই অপার্থিব মহাভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার বিশদ বিবরণ এই গ্রন্থেই সর্বপ্রথম প্রকাশ লাভ করল। এই ঘটনাটি ছাড়াও বাবার আরো দুটি অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা প্রকাশিত হ’য়েছে এই গ্রন্থে। ক্রিয়াযোগের মাধ্যমে নিজের স্থুলদেহ ছেড়ে জ্যোতির্ময় দেহ ধারন করে অমৃতলোক থেকে তাঁর মাকে নিজদেহে নিয়ে আসার অভিজ্ঞতা এবং হিলির সীমান্তের কাছে বিদেহী আত্মা যোগেশ্চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে সাক্ষাৎ করার অভিজ্ঞতা। এছাড়াও আমার দিদিমার মায়ের মৃত্যুর পর সন্তানের আকর্ষণে বারবার পৃথিবীতে ফিরে আসার কাহিনীও এই গ্রন্থের সত্যঘটনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হ’য়েছে। সেই সাথে ম্যাডাম ক্যাথারিনের সিয়ান্স-চক্রে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের আত্মার সাথে ডঃ সুবিনয় দাশের সাক্ষাতের অভিজ্ঞতা এবং গ্যাংটকের কাছে অন্ধকার বনপথে বিদেহী মিলিটারী অফিসার হরভজন সিং- এর মাধ্যমে আমাদের নিশ্চিত বিপদ থেকে উদ্ধারলাভের অভিজ্ঞতাও এই গ্রন্থটিকে সমৃদ্ধ করেছে। এই প্রতিটি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিদেহী আত্মাদের সৌজন্যে পরলোক সম্বন্ধে যে তথ্য আমরা জানতে পেরেছি সেসবই গ্রন্থাকারে এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আমি। আশা করি – এই অপুর্ব অভিজ্ঞতাগুলি আমার সহৃদয় পাঠক-পাঠিকাদের অশেষ তৃপ্তি যোগাবে।

In stock

60.00

Additional information

Weight 150 g

Reviews

There are no reviews yet.

Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.