-20%

Tumi Pitamaho / ‘তুমি পিতামহ’

Book : Tumi Pitamaho / ‘তুমি পিতামহ’

Author : Tridib Kumar Chattopadhyay

Publisher : Patra Bharati

Language : Bengali

Cover : Heard Cover

 

In stock

80.00

Description

রাজা শান্তনু তীব্রবেগে রথ চালনা করছিলেন ৷ মাঝে-মাঝে আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন ৷ হস্তিনাপুর থেকে কান্যকুব্জ বহু দূরের পথ ৷ বেরিয়েছেন সেই ঊষাকালে ৷ দিবসের দ্বিতীয় প্রহরের মধ্যে তাঁকে পৌঁছতেই হবে ৷
ঘোড়া দুটি ক্লান্ত হয়ে পড়ছে ৷ রাজারও সর্বাঙ্গ দিয়ে জলের মতো স্বেদ বেরোচ্ছে ৷ তবু বিরতি নেওয়ার সময় নেই ৷
একটানা শব্দ…খট্‌ খট্‌…! অশ্বখুরে ধুলো উড়ছে ভূমিতে ৷
কাল রাতে তাঁর একমাত্র স্ত্রী দেবী গঙ্গা আবির্ভূত হয়েছিলেন ৷ তাঁদের সন্তান দেবব্রতকে সঙ্গে নিয়ে তিনি উপস্থিত হবেন কান্যকুব্জের গঙ্গাতীরে ৷ একযুগ আগের অঙ্গীকার অনুযায়ী দেবব্রতকে ফিরিয়ে দেবেন, রাজা শান্তনুর কাছে ৷
তীব্র কৌতূহলে আর একমাত্র সন্তানের প্রতি বাৎসল্য কল্পনায় কাল রাত নির্ঘুম কেটেছে ৷
অবশেষে এসে পৌঁছলেন ৷ সূর্যের দিকে তাকালেন ৷ স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন ৷ না, বিলম্ব হয়নি ৷
ব্যাপ্ত, দিগন্তপ্রসারী গঙ্গা ৷ কিন্তু কী আশ্চর্য! গঙ্গার অববাহিকায় জল নেই কেন? শান্তনু বিস্মিত ৷ একধার দিয়ে তিরতির করে জলধারা বইছে ৷ কী হল গঙ্গার? সে কবে থেকে এমন হতশ্রী শুষ্ক হয়ে গেল?
শান্তনুর মন বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেল ৷ বরবর্ণিনী গঙ্গাকে এখনও তিনি বড় ভালোবাসেন ৷ এখনও পুরোনো দিনগুলি স্মরণে এলে প্রাণের মধ্যে হু-হু করে ওঠে ৷
ভ্রু কুঞ্চিত করে তিনি গঙ্গার উৎস দেখতে চেষ্টা করছেন ৷ দেখা যাচ্ছে না ৷ দিগন্তের ওই কোণ কুয়াশায় ঢাকা ৷
রথে উঠে পড়লেন শান্তনু ৷ ধীরে-ধীরে রথ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন গঙ্গার পাড় ধরে ৷ প্রায় দু-ক্রোশ যাওয়ার পরে এক অস্বাভাবিক দৃশ্য দেখলেন ৷
এক দেবকান্তি কিশোর গঙ্গার একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎগতিতে শরচালনা করে চলেছে ৷ সেই তীরগুলি প্রবল বেগে প্রাচীর তুলে দিচ্ছে গঙ্গার বুকে, জলধারা কিছুতেই প্রবাহিত হতে পারছে না ৷ তার শরবর্ষণে গঙ্গাকে দেখা যাচ্ছে না, চরাচর প্রহেলিকায় ঢেকে গেছে ৷
এ কী ধরনের ক্রীড়া? কে এই কিশোর? গঙ্গাকে এভাবে রুদ্ধ করে দিলে জলচর প্রাণী-উদ্ভিদ মারা যাবে, বিপন্ন হয়ে পড়বে পৃথিবী ৷ এই ভয়ানক শরাঘাতে গঙ্গার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হচ্ছে ৷
দ্রুতপায়ে এগিয়ে গেলেন শান্তনু ৷
‘এই যে ছেলে! শুনছ? এ কী করছ?’
কিশোর মুহূর্তের জন্য শরক্ষেপণ থামিয়ে ওঁর দিকে ফিরল ৷ মুখে লাজুক, দুষ্টু হাসি ৷ কোনও উত্তর দিল না ৷ আবার মেতে উঠল তীরবর্ষণে ৷
‘কে তুমি? উত্তর দাও ৷ এ কাজ করছো কেন? কেন ব্যথা দিচ্ছ দেবী গঙ্গাকে?’
সে আবার ফিরে তাকাল ৷ নিরুত্তর ৷ সেই হাসি মুখ ৷ তারপর তীর-ধনুক পাশে ফেলে ঝাঁপ দিল গঙ্গায় ৷
শান্তনু কিছুই বুঝতে পারছেন না ৷ গঙ্গা স্রোতস্বিনী হয়ে আবার দুই কূল ছাপিয়ে বইতে লেগেছে ৷ কিশোর অন্তর্হিত ৷
তাঁর কি দৃষ্টিবিভ্রম ঘটল? প্রখর দিবালোকে কোনও মায়ার খেলা দেখছিলেন? আকাশের দিকে তাকালেন ৷ সূর্যদেব মধ্যগগনের দিকে পাড়ি দিয়েছেন ৷
এইসময় গঙ্গার জল থেকে উঠে এলেন অপরূপা এক নারী ৷ শান্তনু শিহরিত হলেন ৷ গঙ্গা ৷ তাঁর জীবনের প্রথম নারী ৷…
সে কতকাল আগের কথা ৷ শান্তুনু তখন সদ্য হস্তিনাপুরের সিংহাসনে বসেছেন ৷ সুঠাম গৌরকান্তি, ঈর্ষণীয় সুপুরুষ যুবক ৷
মৃগয়া করতে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছিলেন এই গঙ্গাতীরে ৷ শিবির থেকে বেরিয়ে ভোরবেলা দাঁড়িয়েছিলেন এই নদীতীরে ৷
সহসা বিস্মিত হয়ে দেখলেন, জলের মধ্য থেকে উঠে এল এক অপরূপা নারী ৷ মুখে তার মৃদু হাসি ৷ নারী এগিয়ে এল রাজার দিকেই ৷
‘আপনি মহারাজ শান্তনু?’
সে কথা বলল, মনে হল যেন কোকিল গান গেয়ে উঠল ৷ শান্তনু রোমাঞ্চিত, মুগ্ধ ৷
‘হ্যাঁ ভদ্রে ৷ আপনি?’
‘আমি গঙ্গা ৷ মহারাজ, আপনার সঙ্গে আমার বিবাহ বিধাতা-নির্দিষ্ট ৷ আপনি কি আমার পাণিগ্রহণ করতে প্রস্তুত?’
কী বলছে এই অপরূপা? এ তো অপ্সরা, দেবী! সে বিবাহ করতে চাইছে তাঁর মতো একজন নশ্বর মানুষকে? শান্তনু নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না, কণ্ঠ দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না ৷
ক্ষণকাল পরে নিজেকে সংযত করে বললেন, ‘এ তো আমার সৌভাগ্য! আপনি আমায় বিবাহ করতে চাইবেন, কল্পনা করতে পারছি না ৷’
গঙ্গা হাসল৷ বলল, ‘জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ সব পূর্ব নির্দিষ্ট থাকে মহারাজ ৷ আপনি আমার স্বামী হওয়ার সব গুণের অধিকারী ৷ আমিও সৌভাগ্যবতী ৷’
সেই লগ্নেই দুই উৎসুক প্রাণের মিলন ঘটল গান্ধর্বমতে ৷ মাল্যদান হল প্রজাপতি ব্রহ্মা ও বসুন্ধরাকে সাক্ষী রেখে ৷
দুজনের জন্য একটি ছোট্ট কুটির নির্মাণ করে রাজার অনুচররা ফিরে গেল ৷
বিবাহের প্রথম রাত্রেই গঙ্গা বলল, ‘মহারাজ ৷ আমার একটি সামান্য শর্ত আছে ৷ তুমি সেই শর্ত মানবে, আমায় কথা দাও ৷’
শান্তনু নারীর প্রথম স্পর্শে শিহরিত ৷ আবেশজড়ানো স্বরে বললেন, ‘আমি, আমি তোমার যেকোনও শর্তে সম্মত প্রিয়া ৷’
‘আমার শর্ত—আমি তোমার মনোরঞ্জন, সেবা, গার্হস্থ্যকর্ম সব করব ৷ তোমার কোনও ইচ্ছাতে কখনও না করব না ৷ তেমনই তুমিও আমার কোনও কর্মের জন্য কোনও ব্যাখ্যা চাইতে পারবে না ৷ যে মুহূর্তে চাইবে, তোমায় ত্যাগ করে আমি চলে যাব ৷ সম্মত?’
‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই ৷’
একবছর কেটে গেল৷ গঙ্গা যথাসময়ে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দিল ৷ তারপরেই ঘটল সেই ভয়ংকর ঘটনা ৷
গঙ্গা সেই সদ্যোজাত শিশুকে ছুঁড়ে দিল নদীর জলে ৷
শান্তনু স্তম্ভিত ৷ তিনি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন ৷ পরক্ষণে মনে পড়ল, প্রিয়তমার শর্তের কথা ৷ কষ্ট বুকে চেপে তিনি কুটিরে ঢুকে গেলেন ৷

Additional information

Weight 400 g

Reviews

There are no reviews yet.

Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.